ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মাঝেই বড়সড় হামলা চালাল ইজরায়েল

ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগের মাঝেই বড়সড় হামলা চালাল ইজরায়েল। রাষ্ট্রপুঞ্জ নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (IAEA)-র ডিরেক্টর জেনারেল রাফায়েল গ্রোসি বৃহস্পতিবার অভিযোগ করেছিলেন, ইরান আন্তর্জাতিক বিধিনিষেধ ভেঙে গোপনে পরমাণু কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। কিছু ঘণ্টার মধ্যেই ইজরায়েলি বিমানবাহিনী ‘অপারেশন রাইজ়িং লায়ন’ চালিয়ে ইরানের ছ’টি গুরুত্বপূর্ণ পরমাণু ও সামরিক স্থাপনায় ভয়াবহ হামলা চালায়।
দু’শোরও বেশি যুদ্ধবিমান ও বোমারু বিমান এই অভিযানে অংশ নেয়। মৃত্যু হয়েছে একাধিক ইরানি সেনাকর্তা ও পরমাণু বিজ্ঞানীর। তবে পরিকাঠামোগত ক্ষতির বিষয়ে স্পষ্ট কিছু জানা যায়নি। অতীতেও ইজরায়েল হামলা চালালেও ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় বড় প্রভাব পড়েনি।
অভেদ্য সুরক্ষা, কিন্তু উদ্বেগের বিষয় ইউরেনিয়ামের মজুত
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ইরানের ভূগর্ভস্থ পরমাণুকেন্দ্রগুলি বহুস্তরীয় কংক্রিটে ঢাকা, যেগুলি সাধারণ বোমায় ধ্বংস করা অসম্ভব। তেহরান যদিও এখনও ৯০% বিশুদ্ধ ইউরেনিয়াম তৈরি করতে পারেনি, যা একটি কার্যকর পরমাণু বোমা তৈরির জন্য জরুরি। তবু তারা ইতিমধ্যেই ৬০% পরিশুদ্ধ ২৭৫ কেজি ইউরেনিয়াম উৎপাদন করেছে, যা কম ক্ষমতাসম্পন্ন পরমাণু বোমা তৈরিতে যথেষ্ট।
আবার উত্তপ্ত হচ্ছে ‘পরমাণু চুক্তি’ ইস্যু
২০১৫ সালে ওবামা সরকারের সময়ে ছয় শক্তিধর রাষ্ট্রের সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তি হয়েছিল (জেসিপিওএ)। চুক্তি ভেঙে ২০১৮ সালে বেরিয়ে যান তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি এখন আবার চুক্তি পুনর্বহালের জন্য চাপ দিচ্ছেন, কিন্তু সেই সঙ্গে হুমকিও দিচ্ছেন— ইউরেনিয়াম পরিশোধন বন্ধ না হলে আরও বড় হামলা আসবে।
তেহরানের প্রতিক্রিয়া: “শেষ অধ্যায়টা আমরা লিখব”
হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজ়েকশিয়ান পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। কোম শহরের জামকারান মসজিদের চূড়ায় লাল পতাকা উত্তোলন করে কার্যত যুদ্ধের ঘোষণা দিয়েছে ইরান। ইজরায়েলি হামলার জবাবে তারা শতাধিক ড্রোন পাঠালেও, ইজরায়েলের ‘আয়রন ডোম’ সেগুলি সফলভাবে থামিয়ে দেয়।
পশ্চিম এশিয়ায় উত্তেজনা চরমে
ইরানের পাশে থাকা গোষ্ঠীগুলি— হামাস, হিজবুল্লা ও হুথি বিদ্রোহীরা ইতিমধ্যেই কোণঠাসা। সিরিয়ায় শাসন পরিবর্তনের পর রাশিয়ার ভূমিকা নিয়েও অনিশ্চয়তা। এমন পরিস্থিতিতে, ইজরায়েলকে আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে জর্ডনের ভূমিকা তেহরানের উপর চাপ আরও বাড়িয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মত: আসল লক্ষ্য ‘খামেনেই রাজের’ পতন
পশ্চিমা কূটনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছেন, পরমাণু ইস্যু হয়তো শুধু একটা অজুহাত। আসল লক্ষ্য ইরানের ক্ষমতার কেন্দ্র— সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনেই ও তাঁর সরকারকে সরানো।
source: ABP Ananda