
সূর্যকে ঢেকে দিল কৃত্রিম উপগ্রহ! তৈরি হল এক ‘অকাল সূর্যগ্রহণ’। শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, এই অবিশ্বাস্য সাফল্য এসেছে ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইএসএ (ESA)-র হাত ধরে। তাঁদের নতুন মহাকাশ অভিযান ‘প্রোবা-৩ (Proba-3)’-তে বিজ্ঞানীরা প্রথমবার কৃত্রিম ভাবে সূর্যের পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন।
কীভাবে সম্ভব হল কৃত্রিম সূর্যগ্রহণ?
‘প্রোবা-৩’ মিশনে দুটি উপগ্রহ ব্যবহার করা হয়েছে— করোনাগ্রাফ ও অকালটার। এরা পৃথিবীর কক্ষপথের বাইরে, একে অপরের থেকে ১৫০ মিটার দূরত্বে অবস্থান করে।অকালটার উপগ্রহে থাকা একটি বিশেষ চাকতি সূর্যের মূল আলোকে ঢেকে দেয়, যার ফলে তার ছায়া পড়ে অন্য উপগ্রহ করোনাগ্রাফ-এর উপর।
ফলে এক প্রকার কৃত্রিম পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ সৃষ্টি হয়, যার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা সূর্যের বাইরের স্তর করোনা (Corona)-কে অনেক স্পষ্টভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারেন।
কৃত্রিম সূর্যগ্রহণের গুরুত্ব কী?
প্রাকৃতিক সূর্যগ্রহণ বছরে একবার বা দেড় বছরে একবার ঘটে এবং তা মাত্র কয়েক মিনিট স্থায়ী হয়। ফলে গবেষণার জন্য খুব কম সময় পাওয়া যায়।
কিন্তু এই নতুন প্রযুক্তিতে প্রতি ১৯.৬ ঘণ্টা অন্তর কৃত্রিম গ্রহণ ঘটানো সম্ভব, এবং তা প্রায় ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে!
এই সময়কালে সূর্যের করোনা স্তর বিশদভাবে দেখা সম্ভব হয়, যা এর আগে প্রায় অসম্ভব ছিল।
করোনা স্তর সম্পর্কে কেন এত কৌতূহল?
সূর্যের করোনা স্তর হচ্ছে সবচেয়ে বাইরের অংশ, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, এর তাপমাত্রা সূর্যের কেন্দ্র থেকেও বেশি!
এই স্তর থেকেই সূর্যের ভয়ঙ্কর বিকিরণ ও সৌরঝড় সৃষ্টি হয়, যা আমাদের পৃথিবীর বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
তাই এই স্তর নিয়ে গবেষণা করা জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ। ‘প্রোবা-৩’-এর সাফল্য সেই গবেষণার পথ অনেকটাই প্রশস্ত করেছে।
বিজ্ঞানীদের অভিমত
এই প্রকল্পের প্রধান গবেষক অ্যান্ড্রেই জ়ুকোভ বলেছেন, “ছবিগুলো দেখে আমি রোমাঞ্চিত! প্রথম চেষ্টাতেই এতটা সাফল্য পাব, ভাবিনি।”
তাঁর মতে, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে নিয়মিত সূর্য পর্যবেক্ষণ সম্ভব হবে এবং সৌরঝড়ের প্রভাব আগেই জানা যাবে। ফলে পৃথিবীর উপগ্রহ ও নেটওয়ার্ক সুরক্ষিত রাখতে সহজ হবে।
source: ABP Ananda