
স্মার্টফোন এখন শুধু যোগাযোগের মাধ্যম নয়—ব্যাংকিং, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, এমনকি অফিসের কাজেও একটি অপরিহার্য যন্ত্রে পরিণত হয়েছে। ঠিক এই প্রযুক্তি নির্ভরতার সুযোগ নিয়েই রাজ্যজুড়ে মোবাইল চুরি এখন রীতিমতো মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে প্রকাশ পেয়েছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে মোবাইল চুরি বেড়েছে প্রায় ৩৮%, যা বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ বৃদ্ধির হার।
🔍 কোন কোন এলাকায় চুরি সবচেয়ে বেশি?
পুলিশের রিপোর্টে দেখা গেছে, রাজ্যের মোট ২৩টি জেলার মধ্যে অন্তত ১৫টি জেলাতে মোবাইল চুরির ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে।
শীর্ষে থাকা জেলা ও শহরগুলি হলো:
- কলকাতা: প্রতিদিন গড়ে ৫৪টি মোবাইল চুরি
- শিলিগুড়ি: প্রতিদিন গড়ে ২১টি
- হাওড়া ও হুগলি: রেলস্টেশন ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বেশি
- মালদহ ও মুর্শিদাবাদ: হাটবাজার ও মেলাঘেঁষা এলাকায় মোবাইল ছিনতাই বেশি
একজন কলকাতা পুলিশ আধিকারিক বলেন,
“বেশিরভাগ চুরি হয় ট্রেন, বাস, মেট্রো, বাজার ও ভিড় এলাকায়। বহু ক্ষেত্রে মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার পর মিনিটের মধ্যেই সেটি বন্ধ করে ফেলা হয়।”
🧠 কীভাবে চোরচক্র কাজ করছে?
পুলিশের তথ্যানুসারে, এই চুরির পেছনে সুনিয়ন্ত্রিত চোরচক্র বা গ্যাং কাজ করছে। সাধারণত চোররা:
- ব্যস্ত বাজার বা বাস-ট্রেনে ভিড়ের সুযোগ নেয়
- যাত্রী বা পথচলতি মানুষের পকেট বা ব্যাগ লক্ষ্য করে
- মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে
- সঙ্গে সঙ্গে ফোন সুইচ অফ করে ফেলে
- পরে ফোন ফ্ল্যাশ করে, IMEI বদলে পাচার করা হয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ফোনগুলো পরে বিহার, ঝাড়খণ্ড, এমনকি বাংলাদেশেও পাচার হয়ে যায়।
নিচে কিছু বছরের পরিসংখ্যান
বর্ষ | মোট অভিযোগ (মোবাইল চুরি) | বৃদ্ধি হার |
---|---|---|
২০২২-২৩ | ১৮,৫৭৫টি | — |
২০২৩-২৪ | ২৫,৭৮৯টি | ↑ ৩৮% |
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এসব ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছে মাত্র ৩৪২ জন, যা মোট ঘটনার ২% এরও কম।
সাধারণ মানুষ কী বলছে এই ঘটনায়?
চুরির ঘটনা বাড়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে।
একজন কলেজ ছাত্রী বলেন:
“মেট্রোতে ওঠার সময় পকেটে মোবাইল ছিল, কিন্তু নামার সময় দেখলাম উধাও। লোকাল থানায় FIR করলেও এখনও ফোন পাওয়া যায়নি।”
অনেকেই বলছেন, অভিযোগ জানালেও মোবাইল উদ্ধার হওয়ার সম্ভাবনা কম, কারণ সাইবার অপরাধ ও প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জের কারণে চোরদের ধরা কঠিন হয়ে পড়েছে।
পুলিশ কী পদক্ষেপ নিচ্ছে?
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ এখন IMEI-ভিত্তিক ট্র্যাকিং সেল, সাইবার ক্রাইম ইউনিট, এবং CCTV-ভিত্তিক নজরদারি বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।
রাজ্যের বড় বড় স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড ও মেট্রো স্টেশনে ইতিমধ্যেই অতিরিক্ত নজরদারি শুরু হয়েছে। এছাড়া, পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের জন্য কয়েকটি পরামর্শও দেওয়া হয়েছে:
- মোবাইল সর্বদা সামনের পকেটে রাখুন
- বেশি ভিড়ের জায়গায় ফোন হাতে ব্যবহার এড়িয়ে চলুন
- স্মার্ট ফোনে Find My Phone চালু রাখুন
- IMEI নম্বর আলাদা কোথাও লিখে রাখুন
মোবাইল চুরি এখন আর সাধারণ অপরাধ নয়—এটি একটি সুসংগঠিত চোরচক্রের কাজ। প্রযুক্তি যত সহজ হয়েছে, বিপদের সম্ভাবনাও তত বেড়েছে।
রাজ্য পুলিশের দায়িত্ব যেমন আছে, তেমনই সাধারণ নাগরিকদের সচেতনতাও অপরিহার্য। প্রতিটি ফোনে থাকে একেকটি ব্যক্তিগত জগৎ—তার নিরাপত্তা রক্ষা করা আমাদের সবার কর্তব্য।
“ফোন হারালে শুধু ডিভাইস নয়, হারিয়ে যায় স্মৃতি, ব্যাঙ্ক অ্যাক্সেস আর নিরাপত্তা। তাই সাবধান থাকুন, সচেতন থাকুন।”